পাড়া গায়ের ছেলে শাহানের জিপিএ-৫ পাওয়ার গল্প
স্টাফ রিপোর্টার: | PhotoNewsBD
১ জুন, ২০২০, ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

এই গল্পটার পুরো ক্রেডিট ডিজিটাল বাংলাদেশের। কারণ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সাগরনালের মেধাবী ছাত্র এহসানুল হক শাহান সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়ায়।
গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেও ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শাহান বলেন, “একমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করেই আমি অনেক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে স্বপ্ন ছুঁয়েছি।”
শাহান বলেন, “জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জিপিএ-৫ পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেই যে এসএসসিতে আমাকে অবশ্যই জিপিএ-৫ পেতে হবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই পরিকল্পিতভাবে পড়ালেখা করি।”
“কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করে গ্রামে থাকার কারণে প্রাইভেট পড়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক পাইনি। কারণ বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, হাইয়ার ম্যাথ এবং ইংরেজির কিছু টার্মস্ সন্তোষজনক ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে পাইনি। এক পর্যায়ে সিলেট শহরে কোচিং করার জন্য চলে যাই। কিন্তু মা-বাবাকে ছেড়ে সেখানে একা থাকতে কষ্ট হয় তাই কয়েকদিনের মধ্যেই আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি।”
শাহান বলেন, “একপর্যায়ে আমার ভাইয়া আমাকে ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে দেন। পরে যখন যেটা বুঝতামনা তখনই সেটা আমি ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে জেনে নিতাম। ইন্টারনেট, গুগল এবং ইউটিউবকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। সেইসাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল কারিগরকেও ধন্যবাদ।”
উল্লেখ্য, এহসানুল হক শাহান জুড়ী উপজেলার সাগরনাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামে।
শাহানের মা আয়েশা আক্তার একজন গৃহিনী এবং বাবা হোসাইন আহমদ আজাদ আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। চার ভাইবোনের মধ্যে শাহান সবার ছোট।
২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন এহসানুল হক শাহান। এবার এসএসসিতে এ+ পেয়ে মা-বাবা, ভাইবোন ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাগরনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার বলেন, “ভালো ফলাফল অর্জন করায় আমরা সবাই খুব খুশি। মূলত ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবক সবার আন্তরিকতার সমন্বয়েই এমন অর্জন সম্ভব হয়।”
বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ আশরাফ শিপন বলেন, “যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় থাকলাম। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের এটাই শেষ নয়। কেননা পৃথিবীটা অনেক বড়। অল্পতেই হারলে বা মন ভাঙ্গলে চলবে না।”
এহসানুল হক শাহান বলেন, “আল্লাহর রহমতে মা-বাবা, ভাইবোন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা এবং আমার বিদ্যালয়ের প্রাণপ্রিয় শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদানে আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি।”
অবসরে বই পড়া, মুভি দেখা এবং ইউটিউবে কাজ করতে ভালোবাসেন শাহান। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে ইচ্ছুক শাহান সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।